ইউরোর মন্দার কারণ

বিশ্লেষকরা ইউরোর বিপর্যয়ের পেছনে দুটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন: ইউরোপে জ্বালানি (গ্যাস) সংকট এবং সুদের হার বাড়াতে ইসিবি-এর দ্বিধা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্ররা রুশবিরোধী কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর, ইউরোপীয় অঞ্চলে পুরোদমে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ইউরো দীর্ঘস্থায়ী মন্দার সম্মুখীন হতে পারে। ইসিবিও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি কারণ সুদের হার বৃদ্ধির পদক্ষেপ মন্দার ঝুঁকি তৈরি করে। অন্যদিকে, ফেডারেল রিজার্ভ ইতোমধ্যে আক্রমনাত্মকভাবে সুদের হারে টনা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ফেডের হকিস বা আক্রমণাত্নক নীতির কারণে, বিনিয়োগকারীরা ইউএস ট্রেজারিজের ক্রমবর্ধমান ইয়েল্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, ফলে ইউরোর প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। ফলস্বরূপ, বোর্ড জুড়ে মার্কিন ডলারের র‍্যালি দেখা যাচ্ছে।

ইউরোর দুর্বলতা ইইউ-এর অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে

কিছুদিন আগে, অনেক দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উত্সাহিত করার লক্ষ্যে এবং রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার জন্য তাদের জাতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন মেনে নিত। বর্তমানে, যখন ইইউ জুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে, তখন ইউরোর দুর্বলতা অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইউরো ব্যবহার করে এমন 19টি দেশের জন্য জুন মাসে বার্ষিক ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই হার 8.6%-এ পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা নিশ্চিত যে ইউরোর দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার কারণে ইসিবি মুদ্রাস্ফীতিকে 2% -এর লক্ষ্যমাত্রা স্তরের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারছে না। একই সময়ে, ইউরো অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় মাঝারি মেয়াদে আরও স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করছে, শুধুমাত্র মার্কিন ডলারের চেয়ে পিছিয়ে আছে।

EUR/USD-এর সমতার মাইলফলক

বেশিরভাগ বিশ্লেষক একমত যে EUR/USD পেয়ারের সমতা ল্যান্ডমার্ক লেভেল বা মাইলফলক স্তর হিসেবে কাজ করছে। এটি বৈশ্বিক অর্থবাজারের জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক থ্রেশহোল্ড। 1999 সালের ডিসেম্বরে প্রথমবার ইউরো গ্রিনব্যাকের সাথে সমতায় নেমেছিল । তখন থেকে ইউরোপীয় মুদ্রার শক্তি জোরদার হয়েছে। সম্প্রতি, আবারও ইউরোর পতন শুরু হয়েছে. বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে ইউরো দীর্ঘ সময়ের জন্য বিয়ারিশ প্রবণতায় আটকে যেতে পারে। আপাতত, এটি আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহৃত দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় রিজার্ভ কারেন্সি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংরক্ষিত রয়েছে।

ইউরোর বুলিশ প্রবণতায় বাঁধাগুলো কী কী?

বর্তমানে, ইউরোর পুনরুদ্ধারের প্রশ্নটি এখনও উন্মুক্ত। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, যদি ইউরোপে গ্যাস সংকটের মীমাংসা হয় এবং সুদের হারের ক্ষেত্রে ইসিবি ফেডারেল রিজার্ভের পথ অনুসরণ করে তাহলে ইউরোর মুভমেন্ট বিপরীত হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ইসিবির অনেক আগেই আর্থিক নীতিমালায় কড়াকড়ি আরোপের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল।

এখন পর্যন্ত, মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা তিন মাসের অফিসিয়াল সুদের হার 150 বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। একই সময়ে, সতর্ক ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুলাই মাসে 11 বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মূল সুদের হার 50 বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও, অনেক বিশ্লেষক এই কারণে সন্দিহান যে ইসিবি চলমান আর্থিক নীতিমালা কঠোরকরণের চক্র অব্যাহত রাখবে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, ইসিবি অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলা করা কঠিন বলে মনে করে। কারণটি হল উচ্চতর ঋণ নেওয়ার খরচের ক্ষেত্রে কিছু ইইউভুক্ত দেশে অনিয়ন্ত্রিত ব্যয়ের উচ্চ ঝুঁকি৷

ইউরো কি অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে?

ইউরো প্রত্যাহারের সম্ভাবনা এবং ইউরোপীয় অঞ্চলে ইউরোর পতন সংক্রান্ত প্রশ্নাবলী বাজারের ট্রেডারদের মধ্যে পুনরুত্থিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন যে এই ধরনের ভয় অযৌক্তিক। পূর্বে, ইউরো ইউরোসেপ্টিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হত যারা ইউরো ব্লকের ধারণা এবং ইউরোপীয় অঞ্চলে কার্যকর শাসনের নিন্দা করত। যাইহোক, কর্তৃপক্ষ এই চ্যালেঞ্জ পূরণ করেছে। আপাতত, মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর মন্দা ইউরোপীয় রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিচ্ছে। অন্যদিকে, এরূপ পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।