আরও দেখুন
হাইড্রোকার্বন মার্কেটগুলোতে বর্তমানে অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং ট্রেডাররা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ক্রুড তেলের দাম ইতওমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে এবং অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, WTI-এর মূল্য আরও নিম্নস্তরে পতন এড়িয়ে স্থিতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছে।
২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক WTI ক্রুড তেল ব্যারেল প্রতি $73.00-এর কাছাকাছি ট্রেড করছিল। এই লাইট ক্রুডের ফিউচারগুলো উল্লেখযোগ্য মূল্য হ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে। নিউ ইউর্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (NYMEX)-এ, মার্চে ডেলিভারির জন্য WTI ক্রুড ফিউচারের দর প্রতি ব্যারেল $73.16 ছিল, যেখানে মার্কিন ক্রুডের দর সাময়িকভাবে 0.01% হ্রাস পেয়েছে। তবুও, $73.08 এর কাছাকাছি সাপোর্ট লেভেল দেখা গেছে এবং ব্যারেল প্রতি $76.00-এ রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ICE-এ এপ্রিলে ডেলিভারির জন্য ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দর 0.01% বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেল প্রতি $76.19-এ পৌঁছেছে। ব্রেন্ট এবং WTI কন্ট্রাক্টের মধ্যে মূল্যের পার্থক্য ব্যারেল প্রতি $3.03 হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে মার্কিন ডলার সূচকের ফিউচার, যা প্রধান ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর প্রতিফলিত করে, 0.49% বৃদ্ধি পেয়ে $107.69-এ পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা WTI ক্রুডের দামে চাপ সৃষ্টি করছে। চীনের সামষ্টিক প্রতিবেদনের দুর্বল ফলাফল দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
উইকেন্ডে, ট্রাম্প কলম্বিয়া থেকে আমদানির উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে মার্কেটকে অশান্ত করে তোলেন এবং একই ধরনের পদক্ষেপ চীন, কানাডা, মেক্সিকো, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি সৌদি আরব এবং OPEC-এর ওপর চাপ সৃষ্টিরও ইচ্ছা প্রকাশ করেন যাতে তেলের দাম কমানো যায়। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই শুল্কের প্রভাব সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা WTI তেলের দামে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
নতুন মার্কিন প্রশাসনের জ্বালানি নীতিমালা এই পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে, যা নিকট ভবিষ্যতে WTI দামের স্থিতিশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিঘ্নিত করতে পারে। আর্থিক বিশ্লেষক ডেভিড এং উল্লেখ করেছেন যে, WTI এবং ব্রেন্টের দাম ইতোমধ্যেই অস্থিতিশীল ছিল এবং এখন মার্কিন বাণিজ্য নীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় আরও চাপের মুখে রয়েছে। এং বলেন, "ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে অল্প সময়ের জন্য শুল্ক আরোপ করা হলেও, একই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।"
এর মধ্যে চীনা স্টার্টআপ ডিপসিকের-এর উত্থান পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে, যা জনপ্রিয়তা এবং বাজার মূলধন উভয় দিক থেকেই চ্যাটজিপিটি-কে ছাড়িয়ে গেছে। এই স্বল্প-ব্যয়সম্পন্ন আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স (AI) মডেল ডেটা সেন্টারগুলোর জ্বালানি চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এই সপ্তাহে মার্কেটের ট্রেডাররা ২৯ জানুয়ারি বুধবার অনুষ্ঠিতব্য ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছেন। এই বৈঠকে সুদের হারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, বর্তমান অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভবত মূল সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে।
তেলের ট্রেডাররাও ভবিষ্যৎ আর্থিক নীতিমালার অন্তর্দৃষ্টি পাওয়ার জন্য ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির জানুয়ারির বৈঠকের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। ফেড যদি হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে, তবে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং WTI তেলের চাহিদার প্রত্যাশা কমিয়ে দিতে পারে। বিপরীতে, ফেডের ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান তেলের দামকে স্বল্পমেয়াদে সমর্থন করতে পারে।