আরও দেখুন
গত দুই বছরে, একটি প্রশস্ত কিন্তু সাইডওয়েজ রেঞ্জে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের ট্রেড করা হয়েছে, যেখানে একদিকে ইউরোজোন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ সুদের হার, এবং অন্যদিকে মার্কিন অর্থনীতির দুর্বলতা ও ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভারসাম্য বজায় রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এই পেয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুভমেন্ট দেখা গেছে বছরের শেষ তিন মাসে, যা মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের কারণে হয়েছে। তার অর্থনৈতিক এজেন্ডা—যার মধ্যে কর কমানো, শুল্ক বৃদ্ধি, এবং দেশীয় উৎপাদন খাতকে সমর্থন করার জন্য অন্যান্য রক্ষণাত্নক পদক্ষেপ, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতা ও পুনরুত্থান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—ডলারকে শক্তিশালী করার মূল কারণ ছিল। এই প্রক্রিয়া সমস্ত প্রধান মুদ্রার মধ্যে ঘটেছে এবং ০.৫০% করে দুইবার সুদের হার কমানোর পরেও এই ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থেকেছে।
যখন মার্কিন ডলার মৌলিক পটভূমি থেকে সমর্থন পেয়েছে, ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) ২% এর লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমে যাওয়ার কারণে এবং সেপ্টেম্বর মাসে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এই স্তরের নিচে থাকার কারণে ইউরো দুর্বল হয়েছে। ডিসেম্বরে, ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ২.২% হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ২.৭% এর চেয়ে এখনও কম। ইউরোপে লক্ষ্যমাত্রার সামান্য উপরে স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি ইসিবির আর্থিক নীতিমালার আরও নমনীয়করণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়, যা ফেডারেল রিজার্ভের (Fed) থেকে ভিন্ন অবস্থান, যেখানে আরও সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
স্পেনের সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদন, যা নতুন বছরের ঠিক আগে প্রকাশিত হয়েছিল, ইসিবির ধীরগতিতে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরে স্পেনের ভোক্তা মূল্য সূচক বার্ষিক ভিত্তিতে বেড়ে ২.৮%-এ পৌঁছেছে, যেখানে নভেম্বর মাসে এটি ২.৪% ছিল, এবং এই সূচক ২.৬% এর পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্পেন ইউরোজোনের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি।
এই প্রবণতা ইসিবির সতর্কতামূলক নীতি বজায় রাখার কারণকে সমর্থন করে, যেখানে ২০২৪ সালে ০.২৫% করে চারবার সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২৫ সালে আরও চারবার সুদের হার কমানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা সুদের হারকে ২%-এ নিয়ে আসবে। অন্যদিকে, ফেড এই বছর মাত্র দুইবার ০.২৫% করে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা করছে। ইউরোজোনের প্রধান অর্থনীতিগুলোর প্রতিবেদন এখনো ছুটির কারণে প্রকাশিত হয়নি, ফলে স্পেনের প্রতিবেদনটি ছুটির পরের সপ্তাহের মূল প্রতিবেদন হিসেবে রয়ে গেছে। ইউরোজোন এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে বৈচিত্র্যমূলক আর্থিক নীতির কারণে ২০২৪ সালে ইউরোর মূল্য প্রায় ৬% কমেছে।
যখন ইসিবি ধীরে ধীরে আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণের পথে এগোচ্ছে, ফেড হার-কমানোর পূর্বাভাস হ্রাস করেছে, যা ডলারের শক্তিশালীকরণ এবং ইউরোর দুর্বলতার ক্ষেত্রে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে সম্ভাব্য নীতিগত পরিবর্তন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাও ইউরোকে আরও চাপে ফেলছে।
এই বছরে এই পেয়ারের সম্ভাবনা কী?
যদি EUR/USD পেয়ারের বর্তমান প্রভাবকগুলো—যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি, ইউরোজোনে অব্যাহত মন্দা, এবং ট্রাম্পের নতুন অর্থনৈতিক নীতির বাস্তবায়ন—অবিচল থাকে, তবে এই পেয়ারের মূল্য ১.০০০০-এ সমতার স্তরে বা এমনকি সেপ্টেম্বর ২০২২ বা জানুয়ারি ২০০১-এর স্তরে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দৈনিক পূর্বাভাস:
EUR/USD: ২০২৪ সালের শেষ দিনের ট্রেডিংয়ে এই পেয়ারের মূল্য আমাদের প্রথম লক্ষ্য ১.০৩৪৫-এ নেমে এসেছে। এই লেভেলটি ব্রেক করা হলে এই সপ্তাহের শেষের দিকে মূল্য ১.০২৫০-এ নেমে যেতে পারে।
EUR/JPY: এই পেয়ারের মূল্য এখনও ১৬২.৪০ এর সাপোর্ট লেভেলের উপরে রয়েছে। এই লেভেলটি ব্রেক করা হলে মূল্য আরও নিচে ১৬০.৬৫-এ নেমে যেতে পারে, কারণ ইসিবি এই বছরে সুদের হার কমাবে বলে বলে প্রত্যাশা রয়েছে এবং জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভাব্যভাবে সুদের হার বৃদ্ধি করতে পারে।